বিদেশ ভ্রমণের স্বপ্ন অনেকেরই। আর সেই স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ হল টুরিস্ট ভিসা। কিন্তু ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া জটিল মনে হলেও, সঠিক প্রস্তুতি ও ডকুমেন্ট নিয়ে এগোলে সফলতা পাওয়া খুবই সহজ। চলুন জেনে নেওয়া যাক, একটি টুরিস্ট ভিসা পেতে কি কি প্রয়োজন।
টুরিস্ট ভিসার জন্য মৌলিক শর্তাবলী:
১. বৈধ পাসপোর্ট: আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ভ্রমণের তারিখ থেকে আরও ৬ মাস থাকতে হবে। নতুন ভিসার জন্য ফাঁকা পৃষ্ঠা থাকা আবশ্যক।
২. ভিসা আবেদন ফর্ম: লক্ষ্য দেশের এম্ব্যাসি/ভিসা সেন্টারের ওয়েবসাইট থেকে সঠিকভাবে পূরণকৃত ফর্ম। অনলাইনেও জমা দিতে হতে পারে (যেমন: DS-160 for USA)।
৩. রঙিন ছবি: সাইটের নির্দেশিকা অনুযায়ী সাইজ ও ব্যাকগ্রাউন্ডের (সাধারণত সাদা) রঙিন পাসপোর্ট সাইজ ফটো।
টুরিস্ট ভিসার জন্য আবশ্যকীয় কাগজপত্র (ডকুমেন্ট চেকলিস্ট):
- আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ: ব্যাংক স্টেটমেন্ট (গত ৬ মাস), সঞ্চয়ের প্রমাণ, ফিক্সড ডিপোজিট। দেখাতে হবে যে ভ্রমণ ও থাকার খরচ আপনি বহন করতে পারবেন।
- চাকরির প্রমাণ: নিয়োগপত্র, বেতনের স্লিপ, ছুটির অনুমতিপত্র (No Objection Certificate – NOC)।
- ব্যবসায়ীর জন্য: ট্রেড লাইসেন্স, কোম্পানির টিন সার্টিফিকেট, ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
- বিমান টিকেট ও থাকার ব্যবস্থা: কনফার্মড রিটার্ন টিকেট এবং হোটেল বুকিং।
- ভ্রমণ ইতিবৃত্ত (ইটিনেরারি): দিনভিত্তিক ভ্রমণ পরিকল্পনা।
- ব্যক্তিগত সম্পর্কের প্রমাণ: পরিবারের সদস্যদের তথ্য, পারিবারিক ছবি, জমিজমার দলিল (যদি থাকে)।
- ভ্রমণ বীমা: অনেক ইউরোপীয় দেশের জন্য (সেনজেন) বাধ্যতামূলক।
টুরিস্ট ভিসা আবেদনের ধাপসমূহ:
১. গন্তব্য নির্ধারণ: কোন দেশে ভ্রমণ করবেন, সেটা প্রথমেই ঠিক করুন।
২. অনলাইন রিসার্চ: সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।
৩. অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং: অনেক দেশের জন্য অনলাইনে তারিখ নিতে হয়।
৪. ডকুমেন্ট প্রস্তুত: উপরোক্ত তালিকা অনুযায়ী সবকিছু গুছিয়ে নিন।
৫. ফর্ম পূরণ ও ফি জমা: নির্ভুলভাবে ফর্ম পূরণ করে ভিসা ফি দিয়ে দিন।
৬. বায়োমেট্রিক ও ইন্টারভিউ: প্রয়োজনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও সাক্ষাৎকার দিতে হবে।
৭. পাসপোর্ট জমা ও ফলাফল: সাধারণত কয়েক কার্যদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট ফেরত পান।
আরও জানতে পারেনঃ ইন্ডিয়ান ভিসা করতে কি কি লাগে
টুরিস্ট ভিসা পাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
- সত্যতা: সব তথ্য ও কাগজপত্র ১০০% সত্য হতে হবে।
- পর্যাপ্ত ফান্ড: ব্যাংক স্টেটমেন্টে পর্যাপ্ত টাকার প্রবাহ দেখান।
- দেশে ফেরার আকাঙ্ক্ষা: চাকরি, ব্যবসা, সম্পত্তি ইত্যাদির মাধ্যমে প্রমাণ করুন যে আপনি দেশে ফিরে আসবেন।
- প্রথমবারের জন্য: ইউরোপ/আমেরিকার চেয়ে প্রথমবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো (যেমন: থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া) বেছে নিলে ভিসা পাওয়া তুলনামূলক সহজ।
কমন কিছু প্রশ্ন (FAQ):
টুরিস্ট ভিসার জন্য কত টাকা ব্যাংকে থাকতে হবে?
এটা দেশ ও ভ্রমণের মেয়াদের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, প্রতিদিনের খরচ ধরে মোট খরচের চেয়ে ২০-৩০% বেশি দেখানো ভালো।
ইন্টারভিউয়ে কি জিজ্ঞাসা করা হয়?
ভ্রমণের উদ্দেশ্য, চাকরি, আর্থিক অবস্থা, দেশে ফেরার পরিকল্পনা ইত্যাদি।
কত দিন আগে আবেদন করব?
ভ্রমণের কমপক্ষে ১-৩ মাস আগে আবেদন করুন।
শেষ কথা: ভিসা প্রক্রিয়া ধৈর্যের বিষয়। সামান্য অসতর্কতা বা অসম্পূর্ণ ডকুমেন্টের কারণে ভিসা রিজেক্ট হতে পারে। তাই যত্ন সহকারে সবকিছু প্রস্তুত করুন, প্রয়োজনে একটি নির্ভরযোগ্য ট্রাভেল এজেন্সির সহায়তা নিন।