বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাগরের নাম কি এ প্রসঙ্গে জানেন কি? যদি না জেনে থাকেন তাহলে সমস্যা নেই, কারণ আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাগরের নাম কি এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাগর। তাহলে দেরি না করে এই আলোচনাটি শুরু করা যাক।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাগরের নাম কি
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাগরের নাম বঙ্গোপসাগর। বঙ্গোপসাগর মূলত সাগরের ধরণ অনুযায়ী উপসাগর। বঙ্গোপসাগর ভারত মহাসাগরের প্রাথমিক অন্তপ্রবাহের অংশ। বঙ্গোপসাগরের অববাহিকায় পাঁচটি দেশ রয়েছে এই পাঁচটি দেশের নাম হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা ও মিয়ানমার।বঙ্গোপসাগরের সর্বাধিক দৈর্ঘ্য ২০৯০ কিলোমিটার অর্থাৎ ১৩০০ মাইল ও বঙ্গোপসাগরের সর্বাধিক প্রস্থ ১৬১০ কিলোমিটার অর্থাৎ ১০০০ মাইল। বঙ্গোপসাগরের সর্বাধিক গভীরতা ৪৬৯৪ মিটার যা ফুট হিসাবে ১৫৪০০ ফুট।
বঙ্গোপসাগর হলো বিশ্বের বৃহত্তম একটি উপসাগর। বঙ্গোপসাগর এর অবস্থান ভারত মহাসাগরের উত্তর অংশে। বঙ্গোপসাগর দেখতে ত্রিভুজ আকৃতির একটি উপসাগর। বঙ্গোপসাগরের পশ্চিম দিকে দুটি দেশ রয়েছে এই দুটি দেশের নাম ভারত ও শ্রীলংকা, পূর্ব দিকে রয়েছে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড, উত্তর পূর্ব দিকে রয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত তবে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ভারতের অধিভুক্ত হলেও বঙ্গোপসাগরের ঠিক মাঝামাঝি স্থানে এই দুইটি দ্বীপ অবস্থান করছে।
বঙ্গোপসাগরের নামকরণ
বঙ্গোপসাগরের নামকরণ এই নিয়ে একটি ইতিহাস রয়েছে প্রাচীন সনাতন ধর্মের শাস্ত্রে বঙ্গোপসাগরকে “মহোদধি” নামে সম্বোধন করা হয়েছে যার অর্থ বিরাট জলাধার। তাছাড়া প্রাচীন মানচিত্রে বঙ্গোপসাগরকে গ্যাঞ্জেটিকাস সাইনাস বা সাইনাস গ্যাঞ্জেটিকাস নামে পরিচিত এই দুটি কথার অর্থ হচ্ছে “গঙ্গা উপসাগর”। প্রাচীন কালে বঙ্গোপসাগরকে কেউ কেউ “বঙ্গোপসাগর” নামে অবহিত করতেন যা বর্তমান সময়ে পরিবর্তন হতে হতে বঙ্গোপসাগর নামে রূপান্তরিত হয়েছে।
সমুদ্র সৈকত
বঙ্গোপসাগরের অববাহিকায় বর্তমানে চারটি দেশে ১৫ টির মতো সমুদ্র সৈকত ও দ্বীপ রয়েছে। নিম্নে সমুদ্র সৈকত ও দেশের নাম উপস্থাপন করা হয়েছে ছক আকারে:
সমুদ্র সৈকতের বা দ্বীপের নাম | দেশের নাম |
কুয়াকাটা | বাংলাদেশ |
কক্সবাজার | বাংলাদেশ |
নিঝুম দ্বীপ | বাংলাদেশ |
সোনাদিয়া | বাংলাদেশ |
ইনানী সৈকত | বাংলাদেশ |
সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ | বাংলাদেশ |
দীঘা | ভারত |
বকখালি | ভারত |
চাঁদিপুর | ভারত |
মন্দারমণি | ভারত |
পুরী | ভারত |
মেরিনা সৈকত | ভারত |
বিশাখাপত্তনম | ভারত |
অরুগ্রাম | শ্রীলঙ্কা |
গাপালি | মিয়ানমার |
বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের আয়তন কত
বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের মোট আয়তন রয়েছে এক লক্ষ ১৮৮০০১৩বর্গ কিলোমিটার। যা বলতে গেলে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের প্রায় সমান। তবে বঙ্গোপসাগরের মোট আয়তন ২১-৭২ হাজার বর্গ কিলোমিটার
বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণে কি আছে
বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণে রয়েছে শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ উপকূ। যা বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ পশ্চিম সীমানা গঠন করে উপকূলীয় রেখা সিলংকার দক্ষিণ পূর্ব ও উত্তর প্রদেশ এর অন্তর্ভুক্ত শ্রীলংকার তিনটি বন্দর বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বঙ্গোপসাগরের ব্যাপক অবদান রয়েছে। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশের সকল নদীর অববাহিকা দক্ষিনে এসে বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলিত হয়েছে। ফলে দেশের মধ্যে যেমন বন্যা সৃষ্টি হচ্ছে না,তেমনি বঙ্গোপসাগর কারণে সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বাংলাদেশের জনগণ খাবার হিসেবে গ্রহণ করে তাদের চাহিদা মেটাতে পারছে তেমনি প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ সামুদ্রিক মাছ রপ্তানি করে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করছে। যা বাংলাদেশের জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া বাংলাদেশে বঙ্গোপসাগরের অববাহিকায় বেশ কয়েকটি সমুদ্র সৈকত ও দ্বীপ রয়েছে। এ সকল সমুদ্র সৈকতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু সমুদ্র সৈকতের নাম হচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, ইনানী সমুদ্র সৈকও দ্বীপের মধ্যে রয়েছে নিঝুম দ্বীপ,সোনাদিয়া, সেন্টমার্টিন দ্বীপ প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ দেশ ও বিদেশ থেকে বিপুক পরিমান পর্যটক এ সকল স্থানে ঘুরতে আসেন যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া বাংলাদেশে বঙ্গোপসাগরের অববাহিকায় তিনটি সমুদ্র বন্দর গড়ে উঠেছে। এই তিনটি সমুদ্র বন্দরের নাম হচ্ছে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর, পায়রা সমুদ্র বন্দর ও মংলা সমুদ্র বন্দর। এই সকল সমুদ্র বন্দর এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে যেমন পণ্য সামগ্রী রপ্তানি হচ্ছে তেমনি বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ পণ্য সামগ্রী আমদানি করা হচ্ছে যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইল ফলক।
বাংলাদেশের প্রতিরক্ষায় বঙ্গোপসাগর
বাংলাদেশের প্রতিরক্ষায় বঙ্গোপসাগর বেশ ভূমিকা পালন করছে। কারণ বাংলাদেশের তিন দিক থেকে ভারত অবস্থান করলেও দক্ষিণ দিকে সাগর থাকার কারণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সুরক্ষায় বাংলাদেশের নৌ বাহিনী বঙ্গোপসাগরে তাদের একটা পর্যবেক্ষণ প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত,মিয়ানমার, শ্রীলংকা তাদের সীমানায় তাদের দেশের নৌ বাহিনী মোতায়েন করেছে যা প্রতিটি দেশের প্রতিরক্ষায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পরিবেশগত ঝুঁকিতে বঙ্গোপসাগর
বর্তমান সময়ে পরিবেশগত ঝুঁকিতে বঙ্গোপসাগর রয়েছে। কারণ জাহাজ থেকে যেমন তৈল ও বজ্র পদার্থ সাগরে নির্গত হচ্ছে তেমনি শিল্প কারখানার বজ্র পদার্থ নদী হয়ে সরাসরি সাগরে পতিত হচ্ছে। প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে শুরু করে মার্চ মাস পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার এবং ভারত মহাসাগর থেকে দূষিত বায়ু বঙ্গোপসাগরের উপর জমা হয়ে থাকে। এসব দূষিত বায়ুর কারণে বৃষ্টি পাতে ক্ষতিকর উপাদান সহ বৃষ্টি আকারে বঙ্গোপসাগরে ও ভূস্তরে পতিত হয়। যার কারণে পরিবেশে ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি বঙ্গোপসাগর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
শেষ কথা
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাগরের নাম কি এ সম্পর্কে আশা করি আমরা আপনাকে বিস্তারিত তথ্য জানাতে পেরেছি। তবে আপনার আমাদের সকলের দায়িত্ব বঙ্গোপসাগরকে রক্ষা করাও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ লাগানো। না হলে আগামী ২৫ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী জেলা পানিতে তলিয়ে যেতে পারে।