ফিচার

উৎসবে রঙ লাগে মনে, তবে?

উৎসব

যে কোনও উৎসব আসার আগে কিম্বা যাওয়ার আগে সত্যি সত্যিই আমাদেরকে সৎ জীবন বেছে

নেওয়ার অঙ্গিকার জাগিয়ে তুলে যায় কি অন্তরে? তাই যদি হত, তবে আজ এতো হানাহানি, হিংসা -বিদ্বেষ, অনাচার -বিবাধ কি দেখতে হয়! সকল ধর্মের বাণী, ‘মানুষ হিসাবে মানুষের সেবা করা।’ তা যতদিন হচ্ছে না, ততদিন অবধি মানুষ বোধজ্ঞানহীন হয়েই রবে।

যে কোনও উৎসবে রঙ লাগে মনে – কিন্তু মন যদি হয় পরের সর্বনাশ করার জন্য তাহলে যতই বলি, তোমায় আমি রাঙিয়ে দিবো ঈদের বা এই উৎসবের দিনে, তা নিরর্থক হয়েই থাকবে।

যে কোনও উৎসবে আর দোল -হোলির রঙের ধারায় আমরা পাই হৃদয়ের সুধারস। উৎসবে মেশে আনন্দ ও ভালবাসা।

মানুষ যদি মানুষ না হয়, এই পরিবেশে কি রঙের উৎসবে অসংকোচে সুধারস পান করা যায়? বাইরের রং কি ঢাকতে পারে অন্তরের গ্লানিমা?

শুধু দোল -হোলি উৎসব কেন, ঈদ -শবেবরাত সহ কত কি অনুষ্ঠান উদযাপন করে মানুষ। যারা হজ্বে যান, তারা ৬০ হাজার টাকার টিকিটের দাম দেন ১ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকা। তখন প্রশ্ন জাগতেই পারে, এটা ঘুসের টাকা না পরের সর্বনাশ করার টাকা না দুর্নীতি করা টাকা না সুদের টাকা?

দেশজুড়ে বদলে যাচ্ছে পরিবহ ও পরিবেশ। পাল্টে যাচ্ছে মানুষের স্বভাব চরিত্র মুখের ভাষা। রাজনীতি থেকে সমাজনীতি, সর্বত্র কর্কশতার চর্চা। মুখের ভাষা থেকে দৈনন্দিন ব্যবহার, সর্বত্র অমার্জিত উচ্চগ্রাম। আমাদের ভাষা ও ব্যবহার থেকে ক্রমাগত ঝরে যাচ্ছে সৌজন্যবোধ, শিষ্টাচার।

কথায় কথায় বলতে হয়, আমার একবার একখানা ওয়ারিশ সনদপত্র দরকার হওয়াতে কাউন্সিলরকে বললাম, ‘আমার একখানা ওয়ারিশ সনদপত্র দরকার’। এর উত্তরে কাউন্সিলর বললেন, ‘আপনি তো আমাকে ত্রিশ হাজার টাকা দিবেন না, হাজার দশেক টাকা পাঠিয়ে দিলেই পেয়ে যাবেন’। কাউন্সিলরের এই কথাটা শুনবার সঙ্গে সঙ্গে আমার মাথায় হাত – মনে প্রশ্ন জাগল, এই যদি হয় জনপ্রতিনিধি কাউন্সিলের আচার আচরণ স্বভাব, তাহলে ভোটের দরকার কি? ভোটে নির্বাচিত হলে আর বিনা ভোটে নির্বাচিত হলেও স্বভাব চরিত্র কিন্তু পাল্টায় না। অর্থাৎ যে লাউ সে কদু। অথচ একখানা ওয়ারিশ সনদপত্র পাওয়ার জন্য দুই কি আড়াইশ টাকার বেশি লাগার কথা নয়। নাগরিক সেবা যদি না মেলে তাহলে জনপ্রতিনিধির প্রয়োজন কি জন্য?

মানুষের এই স্বভাব চরিত্র আর এই পরিবেশে ঈদের উৎসব বলেন আর রঙের উৎসব বলেন  – এসবে সুধারসের ঝরনা, মাধুর্যের প্রকাশ কি সত্যিই সম্ভব?

বাংলাদেশের যে কোনো উৎসবের আয়োজন করার আগে সবার কুচরিত্র -কুস্বভাব পাল্টানো জরুরি নয় কি?

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দোল উৎসবের অন্তরকথাটি বলে গিয়েছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বসন্তের গানে এই ভাবে ও ভাষায় – ‘মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে, / মধুর মলয় -সমীরে মধুর মিলন রটাতে।’

আজকের দিনের বাঙালি বসন্ত ঋতুর এই রূপকথা থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছে। এদিকে সর্বক্ষেত্রে

মানুষের মধ্যে সিংহভাগই নানানরকম দোষে দুষ্ট। যে জন্য দৈনন্দিন বাস্তব জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে যে কোনো উৎসবের মধুরতা। তেমনি হারিয়ে গেছে মধুর রং ও রসের উৎসব।

আরও পড়ুন: যে দেশে দুই বিয়ে না করলে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড!

যে কোনো উৎসব, যে কোনো আয়োজন – পদে পদে সে রাজনীতির শিকার। কোথাও পালানোর পথ নেই ভালো মানুষের। তার মাঝে যে কোনো উৎসব ও রঙের উৎসব কি নিতান্ত বেমানান নয়?

সম্ভব কি পরের টাকা আত্মসাৎ করে কাউকে হালুয়া রুটি খাওয়ায়ে দুর্নীতি ঢেকে দেওয়া? তেমনি প্রশ্ন, সম্ভব কি পিচকিরির রঙে সব অন্যায় ঢেকে দেওয়া?

যে কোনো উৎসব এবং দোল ও হোলি যেন ঘনিয়ে আসা হতাশা আর অনিশ্চয়তার মধ্যে কিছুক্ষণের রূপকথা! আমাদের মনে আনন্দ লাগছে – আর গায়েই শুধু রং লাগছে। লাগছে কি আমাদের মনে, মননে, জীবনে, সমাজে, সংসারে, পারস্পরিকতায়?

স্থায়ী হচ্ছে কি আমাদের ভাষায়, ব্যবহারে, বোধে?

যে কোনো উৎসব আর এই দোল এবং হোলির রং কি শুধু দু’একদিনের মধ্যেই ক্ষণিক আনন্দ হয়ে, বন্দি হয়ে থাকল না? সেই আনন্দ আর রং কি সত্যি লাগল আমাদের মর্মে? আর সকল কর্মে?

-লিয়াকত হোসেন খোকন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *