কৃষ্ণ সাগর কোথায় অবস্থিত

কৃষ্ণ সাগর কোথায় অবস্থিত এ সম্পর্কে জানার জন্য মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। অনেকেই মনে করেন যে কৃষ্ণ সাগর ভারতে অবস্থিত,প্রকৃতপক্ষে এটি ভারতে অবস্থিত নয়। আসুন এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক

কৃষ্ণ সাগর কোথায় অবস্থিত

কৃষ্ণ সাগর পূর্ব ইউরোপ, ককেসাস ও পশ্চিম এশিয়ার মধ্যে অবস্থিত সাগর । এটি একটি প্রান্তীয় সাগর যা আটলান্টিক মহাসাগরের সাথে বসফরাস প্রণালী, দার্দানেলেস প্রণালী এবং আজভ সাগরের সাথে ক্রার্চ প্রণালী দ্বারা সংযুক্ত।

কৃষ্ণ সাগরের উত্তরে ইউক্রেন এবং রাশিয়া, পূর্বে জর্জিয়া, দক্ষিণে তুরস্ক এবং পশ্চিমে বুলগেরিয়া ও রোমানিয়া দেশ অবস্থিত।

কৃষ্ণ সাগরের আয়তন

কৃষ্ণ সাগরের আয়তন প্রায় ৪৩৬,৪০০ বর্গকিলোমিটার (১৬৮,৫০০ বর্গমাইল) এবং এর সর্বোচ্চ গভীরতা ২,২১২ মিটার (৭,২৫৭ ফুট)। এটি একটি উপবৃত্তাকার সাগর যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১,১৭৫ কিলোমিটার (৭৩০ মাইল) এবং প্রস্থ প্রায় ৬১০ কিলোমিটার (৩৮০ মাইল)।

কৃষ্ণ সাগর মিঠা পানির নাকি লোনা পানির

কৃষ্ণ সাগর একটি লোনা সাগর বা লবনাক্ত পানির সাগর। এর লবণাক্ততা প্রায় ১৭-১৮ প্রায়শই বিশুদ্ধ পানির চেয়ে বেশি। এটি কারণ কৃষ্ণ সাগরে প্রবাহিত নদীগুলির জল তুলনামূলকভাবে কম লবণাক্ত, এবং সাগরের জল বাষ্পীভূত হওয়ার সাথে সাথে লবণ জমা হয়। কৃষ্ণ সাগরের লবণাক্ততা বছরের বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হয়। শীতকালে, লবণাক্ততা বেশি থাকে কারণ নদীগুলির জল কম লবণাক্ত থাকে। গ্রীষ্মকালে, লবণাক্ততা কম থাকে কারণ নদীগুলির জল বেশি লবণাক্ত থাকে।

কৃষ্ণ সাগরের লবণাক্ততা জীববৈচিত্র্যের উপর প্রভাব ফেলে। লোনা জল কিছু প্রজাতির উদ্ভিদ এবং প্রাণীর জন্য উপযুক্ত, যেমন শৈবাল এবং লবণাক্ত জলের মাছ। তবে, অন্যান্য প্রজাতির জন্য, যেমন মিঠা পানির মাছ, লবণাক্ত জল বিষাক্ত হতে পারে। কৃষ্ণ সাগরের লবণাক্ততা পরিবেশের উপরও প্রভাব ফেলে। লবণাক্ত জল উদ্ভিদের বৃদ্ধিকে বাধা দিতে পারে এবং মাটিকে ক্ষয় করতে পারে।

কোন প্রণালী ভূমধ্যসাগর ও কৃষ্ণ সাগরকে যুক্ত করেছে

বসফরাস ও দার্দানেলেস প্রণালী ভূমধ্যসাগর ও কৃষ্ণ সাগরকে যুক্ত করেছে। বসফরাস প্রণালী ইস্তাম্বুলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং এটি কৃষ্ণ সাগরকে মর্মর সাগরের সাথে সংযুক্ত করে। দার্দানেলেস প্রণালী গ্রীসের কাস এবং তুরস্কের এজিয়োস প্রদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং এটি মর্মর সাগরকে এজিয়ান সাগরের সাথে সংযুক্ত করে। এই দুটি প্রণালী একসাথে “তুর্কি প্রণালী” নামে পরিচিত। এগুলি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলপথ এবং এগুলি বাণিজ্য, সামরিক এবং পর্যটনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বসফরাস প্রণালী প্রায় 30 কিলোমিটার (19 মাইল) দীর্ঘ এবং এর সর্বোচ্চ প্রস্থ প্রায় 3.7 কিলোমিটার (2.3 মাইল)। এটি একটি সংকীর্ণ প্রণালী যা প্রায়শই ঝড় এবং জোয়ারের দ্বারা প্রভাবিত হয়। দার্দানেলেস প্রণালী প্রায় 65 কিলোমিটার (40 মাইল) দীর্ঘ এবং এর সর্বোচ্চ প্রস্থ প্রায় 7.5 কিলোমিটার (4.7 মাইল)। এটি একটি প্রশস্ত প্রণালী যা সাধারণত বসফরাস প্রণালীর চেয়ে স্থিতিশীল থাকে।

কৃষ্ণ সাগর কেন বলা হয়

কৃষ্ণ সাগরের নামকরণের পিছনে দুটি প্রধান কারণ রয়েছে:

  • প্রথমত, সাগরের পানির রঙ। কৃষ্ণ সাগরের জল প্রায়শই একটি গাঢ় নীল বা সবুজ রঙের হয়, যা দূর থেকে কালো বলে মনে হতে পারে। এর কারণ হল সাগরে প্রচুর পরিমাণে হাইড্রোজেন সালফাইড রয়েছে, যা একটি কালো রঙের যৌগ।
  • দ্বিতীয়ত, সাগরের আকাশের রঙ। কৃষ্ণ সাগরের আকাশ বছরের বেশিরভাগ সময়ই মেঘে ঢাকা থাকে, যা সাগরকে আরও গাঢ় রঙের দেখায়।

কৃষ্ণ সাগরের নামকরণ কত বছর আগে করা হয়েছিল তা নিশ্চিতভাবে জানা যায় না। তবে, ধারণা করা হয় যে এটি খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতাব্দীতে গ্রীকদের দ্বারা করা হয়েছিল। গ্রীকরা সাগরের নাম “Μαύρη Θάλασσα” (Mavri Thalassa) দিয়েছিল, যার অর্থ “কালো সাগর”। কৃষ্ণ সাগরের নামকরণের আরেকটি ব্যাখ্যা হল যে এটি প্রাচীন গ্রীক ট্র্যাজেডি লেখক ইউরিপিডেসের একটি নাটক থেকে এসেছে। নাটকটিতে, কৃষ্ণ সাগরকে “কালো সাগর” বলা হয়েছে কারণ এটি একটি অন্ধকার এবং রহস্যময় স্থান।

আরও পড়ুন: পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট মহাসাগরের নাম কি জানা আছে?

কৃষ্ণ সাগরের গুরুত্ব?

কৃষ্ণ সাগর একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও সামরিক জলপথ। এটি কৃষ্ণ সাগরের দেশগুলির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য ও জল সরবরাহকারী। কৃষ্ণ সাগরের উপকূলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ শহর অবস্থিত, যার মধ্যে রয়েছে ওডেসা, সেভাস্টোপোল, ইস্তাম্বুল এবং তুরস্কের আঙ্কারা।

কৃষ্ণ সাগরের গুরুত্ব নিম্নরূপ:

  • বাণিজ্য ও সামরিক: কৃষ্ণ সাগর একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও সামরিক জলপথ। এটি ভূমধ্যসাগরকে আটলান্টিক মহাসাগরের সাথে সংযুক্ত করে। কৃষ্ণ সাগরের মাধ্যমে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে পণ্য পরিবহন করা হয়। এছাড়াও, কৃষ্ণ সাগরের উপর নিয়ন্ত্রণের অর্থ হল সামরিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকার নিয়ন্ত্রণ।
  • খাদ্য ও জল সরবরাহ: কৃষ্ণ সাগরের উপকূলে অবস্থিত দেশগুলির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য ও জল সরবরাহকারী। সাগরে প্রচুর পরিমাণে মাছ পাওয়া যায়, যা এই দেশগুলির জনসংখ্যার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উৎস। এছাড়াও, সাগরের জল পানীয় এবং সেচের জন্য ব্যবহার করা হয়।
  • পর্যটন:কৃষ্ণ সাগরের উপকূলে অনেক সুন্দর সৈকত রয়েছে, যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এছাড়াও, সাগরের আশেপাশে অনেক ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থান রয়েছে।

বিস্তারিত তথ্য জানতে আপনি Fast Mobile News অপশনে ক্লিক করুন

শেষ কথা

কৃষ্ণ সাগর কোথায় অবস্থিত এ প্রসঙ্গে আশা করি আমরা আপনাকে বিস্তারিত জানাতে পেরেছি। লেখাটি সম্পর্কে কোন মতামত জানাতে কমেন্ট করে জানান।