গ্রীষ্মে পুরো ইউরোপ জুড়ে থাকে উৎসব আনন্দে মুখরিত। মহামারীর প্রথম দুই বছর একটু থমকে দাঁড়ালেও এবার অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে ইউরোপের বড় বড় শহরগুলো। পুরনো জীবনধারায় ফিরে যাবার আপ্রাণ চেষ্টায় সবকিছু স্বাভাবিক করার তোড়জোড় চলছে। ফিরে এসেছে আবার উৎসব আমেজ।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পথ উৎসব যুক্তরাজ্যের এডিনবরা ফ্রিন্জ ফেষ্টিভ্যালের যবনিকা ঘটল ২৯ শে আগষ্ট। আয়োজনকারীদের তথ্যমতে, এডিনবরা ফ্রিন্জ ফেষ্টিভ্যালে ৬৩টি দেশের অংশগ্রহণকারীরা অংশ নেন। আগষ্ট মাস ব্যাপী এই উৎসবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শো’য়ের জন্য বাইশ লাখেরও বেশি টিকেট ইস্যু করা হয়।
এবারের ফেষ্টিভ্যালের উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল বাংলা বাউল গান, ট্রবাডর বা মধ্যযুগে ইউরোপের লোক সংগীত এবং ভালবাসা, কামনা ও দহণের পংক্তিমালা অনবদ্য সুরের মূর্চ্ছণায় এখানে প্রদর্শন করেছে ইউরোপে ভারত উপমহাদেশীয় ও দক্ষিণ এশীয় শিল্পের অন্যতম শীর্ষ সংস্থা সৌধ। স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবরার বাঙ্গালি অধ্যুষিত লিথ এলাকার রয়েল টেরেসে অবস্থিত ইউক্রেনিয়ান সেন্টারে গত ১৭ আগষ্ট সন্ধ্যায় সৌধের মনোরম সংগীতের পরিবেশনায় বিপুল সংখ্যক দর্শক পরিচ্ছন্ন বিনোদন উপভোগ করেন।
সৌধের এবারের পরিবেশনার অন্যতম প্রতিপাদ্য ছিল ট্রবাডর ও বাউল সংগীত। বাংলায় এক সময় যে রকম লেঠো গান কিংবা পুঁথি পাঠ জনপ্রিয় ছিল, ইউরোপেও তেমনি বিভিন্ন ধারার সংগীত জনপ্রিয় ছিল। এরকমই একটি ধারা হচ্ছে ট্রবাডর। একাদশ থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দী জুড়ে দক্ষিণ ফ্রান্স থেকে উত্তর ইটালী পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় এটা বেশ জনপ্রিয় ছিল। স্থানীয়ভাবে অবস্থাপন্নদের বিনোদন প্রদানের জন্য কবিয়ালরা ঘুরে বেড়াতেন সেসব এলাকায়।
সে সময়ের ভালবাসার আকুতি এবং বিরহের দহন দারুণ উপস্থাপনায় তুলে ধরেন সৌধের নিয়মিত শিল্পী এরিক স্কেলেন্ডার। এর আগে ‘শূন্য মন্দির মোর’- মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের কবি বিদ্যাপতির বিখ্যাত এই আখ্যানযুক্ত ‘এ ভরা বাদর মাহ ভাদর’ পংক্তিমালা পাঠ করেন কবি পপি শাহনাজ।
ফরাসী সাহিত্যিক চার্লস বোদলেয়ার এর লেখা থেকে সুমধুর কন্ঠে পাঠ করেন সৌধের নিয়মিত শিল্পী শ্রী গাংগুলি। এরপর স্নেহাশীষ বণিক গেয়ে শোনান একটি লালনগীতি ‘এমন মানব জনম আর কী হবে, মন যা কর ত্বরায় কর এই ভবে’। স্কটল্যান্ডের আবারডিন শহরে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত স্নেহাশীষের সুরের অনুরণনে মুগ্ধ হন হল ভর্ত্তি দর্শক শ্রোতা।
বাউল সংগীত আমার কালিয়া আইলা গো ঘরে, আদর করিতে মুই না জানি গো, তোমরা দেইখো গো তারে ভরাট কন্ঠে গেয়ে শোনান শিল্পী আহমেদ কায়সার। গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করেন সোহেল আহমেদ। নাচ-গানের মুর্চ্ছনায় আলোড়িত হন দেশী-বিদেশী দর্শকদের অনেকেই। পুরো অনুষ্ঠানে ক্রমান্বয়ে অসংখ্য গান, আবৃত্তি ও নাচ পরিবেশন করেন সৌধের কলা-কুশলীরা।
আরও পড়ুন: স্কটল্যান্ডের এডিনবরার সাউথ কুইন্সফেরীর নৌবিহারে
এক সমীক্ষায় এডিনবরা ফ্রিন্জ ফেষ্টিভ্যাল কর্তৃপক্ষ দেখিয়েছেন এবারে উৎসবটি ছিল সবক্ষেত্রেই সফল। মহামারীর পূর্বে ২০১৯ সালের তুলনায় টিকেট বিক্রির হার ছিল শতকরা ৪ ভাগ বেশি। এছাড়া মেলায় আগত বিদেশী দর্শকদের হারও বেড়েছে আগের বারের চেয়ে ২ শতাংশ বেশি। এই সমীক্ষা করোনা মহামারী পেরিয়ে জীবনযাত্রা ক্রমশ: স্বাভাবিক হয়ে উঠার ইঙ্গিত বলেই মনে করেন তারা।