দেশের নাম সাঁউ তুমে ও প্রিন্সিপি

সাঁউ তুমে ও প্রিন্সিপি দেশটির সরকারি নাম ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ সাঁউ তুমে ও প্রিন্সিপি। এ দেশটি হলো মধ্য আফ্রিকার পশ্চিম নিরক্ষীয় উপকূলে গিনি উপসাগরের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র।

এ দেশটি সাঁউ তুমে ও প্রিন্সিপির দু’টি প্রধান দ্বীপের চারপাশে দু’টি দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত। এ দ্বীপ দু’টি একে অপরের থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ। সাঁউ তুমে ও প্রিন্সিপি হল সেশেলসের পরে দ্বিতীয় -ছোট এবং দ্বিতীয় -নিম্ন জনবহুল আফ্রিকান সার্বভৌম রাষ্ট্র।

১৫ শ শতকে পর্তুগিজ অভিযাত্রীরা তাদের আবিষ্কার না করা পর্যন্ত দ্বীপগুলিতে জনবসতি ছিল না। ১৬শ শতক জুড়ে ধীরে ধীরে উপনিবেশ গড়ে ওঠার পরে এখানে  বসতি স্থাপন শুরু হতে থাকে। পর্তুগিজরাই এই অঞ্চলের প্রথম দাস ক্রয় করে দাস ব্যবসা গড়ে তোলে আর এ জন্য এখানকার আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে কয়েকটি পোতাশ্রয় স্থাপন করে। এরপর এ অঞ্চলটি দাস ব্যবসার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও বাণিজ্য কেন্দ্র হিসাবে কাজ করেছিল।

এ অঞ্চলের মাটি মূলত আগ্নেয়গিরি সমৃদ্ধ ও বিষুবরেখার সান্নিধ্যে থাকার কারণে চিনি চাষের জন্যে অতীতকাল থেকেই প্রসিদ্ধ স্থান হয়ে ওঠে। কফি ও কোকোর মতো অর্থকরী ফসলগুলি এক সময় এ অঞ্চলের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে তোলে। চিনি শিল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ক্রীতদাসদের পরিশ্রমের কারণটি বিশেষ ভাবে কাজ করেছিল। যে কোনো অর্থকরী ফসল উৎপাদন ও লাভজনক বৃক্ষ রোপণ আফ্রিকান দাসদের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ছিল।

এ অঞ্চলে ১৯শ ও ২০ শ শতক জুড়ে সামাজিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্য দেশটির উন্নয়ন ও অগ্রগতি পিছিয়ে পড়েছিল।

তবে ১৯৭৫ সালের পর থেকে এ দেশে স্থিতিশীলতা ও শান্তি ফিরে আসে। বর্তমানে এটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।

সাঁউ তুমে ও প্রিন্সিপি দেশটির লোকেরা প্রধানত আফ্রিকান এবং মেসটিকো বংশোদ্ভূত, দেশের বেশির ভাগ লোক রোমান ক্যাথলিক ধর্মের অনুসারী। দীর্ঘদিন পর্তুগিজ শাসনের কারণে দেশটির সংস্কৃতি, রীতিনীতি এবং সঙ্গীতেও দৃশ্যমান, যা ইউরোপীয় ও আফ্রিকান প্রভাবকে অনুসরণ করে থাকে। সাঁউ তুমে ও প্রিন্সিপি পর্তুগিজ ভাষা দেশগুলির সম্প্রদায়ের একটি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রাষ্ট্র।

সাঁউ তুমে ও প্রিন্সিপি দেশের রাজধানী হলো সাঁউ তুমে। দেশের সরকারি ভাষা – পর্তুগিজ। জাতীয়তাবাদ – সান্তোমিয়ান। দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে পর্তুগাল থেকে ১৯৭৫ খৃষ্টাব্দের ১২ জুলাই। দেশের আয়তন মোট ১,০০১ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ২২১,০৮০ জন। দেশটির মুদ্রার নাম – দোব্রা।

রাজধানী সাঁউ তুমে  নামটি পর্তুগিজ শব্দ – এর অর্থ হলো সন্তু তোমাস। আর এই সন্তু তোমাস হলেন যিশুখ্রিস্টের একজন শিষ্য। পর্তুগিজরা ১৫শ শতকে অর্থাৎ ১৪৮৫ খৃষ্টাব্দে এ শহরটি প্রতিষ্ঠা করে, ফলে এটি আফ্রিকার সবচেয়ে প্রাচীন ঔপনিবেশিক নগরীগুলির একটি। পর্তুগিজরা এখানে সর্বপ্রথম আখ চাষ শুরু করে, আর পরবর্তীতে এখানে বিশাল চিনি শিল্প গড়ে ওঠে। এখনও সাঁউ তুমেতে বহুসংখ্যক অতি পুরাতন ঔপনিবেশিক আমলের ভবন রয়ে গেছে, যেগুলোর অধিকাংশই ১৬শ শতকে নির্মিত হয়েছিল। যারা এ শহরে ভ্রমণে আসেন তারা এ সব ঘুরে ঘুরে দেখেন। নগরীটির আয়তন মোট ১৭ বর্গকিলোমিটার। সাঁউ তুমে নগরীটি আটলান্টিক মহাসাগরের গিনি উপসাগরের সাঁউ তুমে দ্বীপের উত্তর –

পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। এটি দেশটির একটি প্রধান বন্দর নগরী। এই শহরে সাঁউ তুমে ও প্রিন্সিপি রাষ্ট্রের জাতীয় জাদুঘর, জাতীয় নথি সংরক্ষণাগার ও একটি বৃহৎ চিকিৎসাকেন্দ্র রয়েছে। সাঁউ তুমে শহরে দর্শনীয় ভবনের মধ্যে রয়েছে – ক্যাথেড্রাল দি সাঁউ তুমে। এটি একটি রোমান ক্যাথলিক মণ্ডলীর মহা গীর্জা, এটি ১৫শ শতকে নির্মিত হয়েছিল। নগরীর কাছেপিঠে রয়েছে সমুদ্র সৈকত আর সেখানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য রিসোর্ট। এই রিসোর্টগুলিতে রাত কাটিয়ে সর্বধরনের আনন্দ -ফূর্তি করা যায়। এই দেশে আনন্দ -উল্লাস করতে নেই কোনো বাধা। তাই দলে দলে পর্যটকরা এ শহরে আসেন সমুদ্র, পাহাড়, অরণ্য, পশুপাখি দেখতে। কেউবা এসে পর্বতারোহণও করেন।

শহরের কেন্দ্র ভাগে প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডগুলি সম্পাদিত হয়। শহরের কাছেই একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। পর্তুগাল, গ্যাবন বা গাবোঁ, অ্যাঙ্গোলা, ঘানা, কাবু ভের্দি ও নাইজেরিয়ার সাথে আন্তর্জাতিক উড্ডয়নের মাধ্যমে বিমানপথে সংযোগ রয়েছে। এছাড়া প্রিসিপি দ্বীপে অভ্যন্তরীন উড্ডয়নের সুবিধাও রয়েছে।

বিষুবরেখার উপরে অবস্থিত সাঁউ তুমে নগরীর জলবায়ু আর্দ্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় প্রকৃতির। এখানের তাপমাত্রা ২৭ থেকে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করে। প্রায়ই বৃষ্টি হয় এ অঞ্চলে। এখানে অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বর্ষাকাল, আবার ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত দ্বিতীয় বর্ষাকাল। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুম ও রৌদ্রোজ্জ্বলের সময়কাল।

Leave a Comment