যে দেশের মানুষ শুকনো ঘাস দিয়ে ঘর বানায়

দেশের নাম – কিংডম অফ ইসোয়াতিনি

সোয়াজিল্যান্ড দেশটির ঐতিহ্য হলো সোয়াজিদের বাড়িঘর কুঁড়েঘরের মতো নির্মাণ করা। 

ঐতিহ্যগত ভাবে তাদের বাড়িঘর শুকনো ঘাস দিয়ে তৈরি করা হয়। একটি বসতবাড়িতে, সংসারের প্রধান নারীর বা স্ত্রীর নিজস্ব কুঁড়েঘর এবং উঠোন থাকে যা খাগড়ার বেড়া দিয়ে ঘেরা। প্রতিটি বাড়িতে ঘুমানো, রান্না করার এবং মালামাল রাখার জন্য তিনটি কাঠামো থাকে। বৃহত্তর বসতবাড়িতে অবিবাহিতদের জন্য কোয়ার্টার এবং অতিথিদের থাকার জন্য আলাদা আলাদা কক্ষ বা ঘর থাকে।

ঐতিহ্যবাহী বসতবাড়ির কেন্দ্রস্থল হল ক্যাটেল বায়রে। এটি একটি বৃত্তাকার এলাকা যা বড় বড় লগ দ্বারা ঘেরা, শাখা দ্বারা বিভক্ত। বিশেষ করে গবাদিপশু রাখার জন্য বড় কুঁড়েঘর বানানো হয়। তাছাড়া প্রতিটি বাড়িতে শস্য রাখার জন্য আলাদা ঘর থাকে।

সোয়াজিল্যান্ডের সোয়াজি হেডম্যানরা একটা নয়, কয়েকটি বিয়ে করে থাকে। হেডম্যান এক এক এলাকার নেতৃত্বে থাকেন। তিনি বাড়ির সমস্ত সামাজিক বিষয়ে তার স্ত্রীদের পরামর্শ দেন, পাশাপাশি পরিবারের মঙ্গল দেখেন।

সোয়াজিল্যান্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হল ইনকওয়ালা অনুষ্ঠান। এটি দীর্ঘতম দিন ২১ ডিসেম্বরের কাছাকাছি পূর্ণিমার পরের চতুর্থ দিনে অনুষ্ঠিত হয়। ইনকাওলাকে প্রায়শই ‘প্রথম ফল অনুষ্ঠান’ হিসাবে অভিহিত করা হয়। এ অঞ্চলের আরেকটি জাঁকজমকপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হল উমহলাঙ্গা রিড ড্যান্স প্রদর্শনী। আট দিনের এ অনুষ্ঠানে মেয়েরা নল কেটে রাণী মায়ের সামনে উপস্থাপন করার পরপরই নৃত্য প্রদর্শন করতে থাকে। এ অনুষ্ঠানটি আগস্টের শেষ দিকে নয়তো সেপ্টেম্বরের শুরুতে করা হয়। শুধুমাত্র নিঃসন্তান, অবিবাহিত মেয়েরা এ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারে। অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য হল, মেয়েদের সতীত্ব রক্ষা করা, রাণী মায়ের জন্য শ্রদ্ধা প্রদান করা এবং একসাথে কাজ করার মাধ্যমে সংহতিকে উৎসাহিত করা।

সোয়াজিল্যান্ড দেশটি ইসোয়াতিনি নামেও পরিচিত।

তবে দেশটির সরকারি নাম – কিংডম অফ ইসোয়াতিনি। এ দেশটি দক্ষিণ আফ্রিকার একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। সোয়াজিল্যান্ডের উত্তর -পূর্ব দিকে মোজাম্বিক ; উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে এ দেশটির সঙ্গে। দক্ষিণ থেকে উত্তরে ২০০ কিলোমিটার এবং পূর্ব থেকে পশ্চিমে ১৩০ কিলোমিটার বিস্তৃত ইসোয়াতিনি বা সোয়াজিল্যান্ড আফ্রিকার ক্ষুদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। দেশটির জলবায়ু এবং স্থলাঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্য রয়েছে।

সোয়াজিল্যান্ড দেশটি শীতল এবং বৃষ্টিপাত যুক্ত উচ্চ পাহাড়ি এলাকা থেকে উষ্ণ ও শুষ্ক নিম্ন এলাকা নিয়ে গঠিত।

দেশের নীতিবাক্য হলো – ‘আমরা একটি দুর্গ’ ; ‘আমরা একটি রহস্য’ ; ‘আমরা নিজেদের লুকিয়ে রাখি’ ; ‘আমরা শক্তিশালীদের অন্যতম’। দেশের জাতীয় সঙ্গীত -‘হে ঈশ্বর, সোয়াজিদের আশীর্বাদদাতা’।

সোয়াজিল্যান্ডে রাজধানী দু’টি। এম্বাবানে হলো কার্যনির্বাহী রাজধানী আর বিধানিক রাজধানী হলো লোবাম্বায়। দেশের বৃহত্তম নগরী হলো মানজিনি। সরকারি ভাষা – সোয়াজি ও ইংরেজি। নৃগোষ্ঠী হলো – সোয়াজি ও জুলু। দেশের অধিকাংশ মানুষ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। অল্প কিছু লোক আফ্রিকান ধর্মাবলম্বী রয়েছে।

সোয়াজিল্যান্ডের আয়তন মোট ১৭,৩৬৪ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ১১,৮০,২০০ জন। মুদ্রার নাম – লিলাঙ্গেনীর, সাইথ আফ্রিকান রেন্ড।

আরও পড়ুন: যে দেশে দুই বিয়ে না করলে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড!

প্রায় ২ লক্ষ বছর আগে, প্রারম্ভিক প্রস্তর যুগে মানবক্রিয়াকলাপের ইঙ্গিতকারী প্রত্নতাত্ত্বিক কিছু বস্তু সোয়াজিল্যান্ডে পাওয়া গেছে। এ দেশে প্রাপ্ত প্রাগৈতিহাসিক রক আর্ট চিত্রকর্ম সমূহ প্রায় ২৭ হাজার বছর আগের। ১৯ শতকের পরবর্তী সময়ে এগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায়।

সোয়াজিল্যান্ডের প্রাচীনতম বাসিন্দারা ছিল খোইসান শিকারী -সংগ্রাহক। বান্টু মাইগ্রেশনের সময় তারা এনগুলি জনগোষ্ঠীর দ্বারা প্রতি স্থাপিত হয়েছিল। এনগুলি জনগোষ্ঠী পূর্ব এবং মধ্য আফ্রিকার গ্রেট লেক অঞ্চল থেকে এসেছিল। এ অঞ্চলে চতুর্থ শতাব্দীর সময় থেকে কৃষি ও লোহার ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। বর্তমান সোথো এবং এনগুনি ভাষা ব্যবহারকারীদের পূর্বপুরুষরা ১১ শতকের পরেই বসতি স্থাপন শুরু করে। সোয়াজি বসতি স্থাপনকারীরা তখন এনগওয়ানে নামে পরিচিত ছিল। সোয়াজিল্যান্ডে প্রবেশ করার আগে তারা মাপুটো এবং মোজাম্বিকের কাছে টেম্বে নদীর এলাকায় রাজ্য স্থাপন করেছিল। কিন্তু ঐ অঞ্চলের জনগণের সাথে ক্রমাগত বিরোধ শুরু হলে তারা ম্লোশেনি পাহাড়ের পাদদেশে শিসেলওয়েনিতে রাজধানী স্থাপন করে। এরপরে তারা সোয়াজিল্যান্ডের কেন্দ্র স্থল জম্বোদজেতে রাজধানী স্থানান্তরিত করে।

১৯০৩ খৃষ্টাব্দে ব্রিটিশরা সোয়াজিল্যান্ড দখল করে নিলে অতঃপর এ অঞ্চল ব্রিটিশ কলোনি হয়ে ওঠে, যা সোয়াজিল্যান্ড প্রোটেক্টরেট নামে পরিচিত। ব্রিটিশদের হাত থেকে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৬৮ খৃষ্টাব্দের ৬ সেপ্টেম্বর।

সোয়াজিল্যান্ড ভিসা:

যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতসহ অনেকগুলো দেশের নাগরিকদের জন্য সোয়াজিল্যান্ড যেতে ভিসার দরকার নেই। তবে বাংলাদেশী পাসপোর্ট বহনকারীদের জন্য ভিসা লাগবে। রিটার্ন টিকেট এবং ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা থাকলে সোয়াজিল্যান্ডের ভিসা পেতে তেমন সমস্যা হবে না। বিস্তারিত তথ্যের জন্য এই লিংক দেখতে পারেন।

– লিয়াকত হোসেন খোকন

Leave a Comment