যেখানে মৃত মানুষের আত্মা দুর্ঘটনা ঘটায়

দেশের নাম বারমুডা

বারমুডায় রয়েছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল, যা শয়তানের ত্রিভুজ নামেও এর পরিচিত। এখানের আটলান্টিক মহাসাগরের একটি বিশেষ অঞ্চল রয়েছে। যেখানে বেশ কিছু জাহাজ ও উড়োজাহাজ রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে প্রায়শই। অনেকে মনে করেন, এ ঘটনার কারণ নিছক দুর্ঘটনা – এর কারণ হতে পারে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা চালকের অসাবধানতা। আবার কেউ মনে করেন, এ সব দুর্ঘটনার পেছনে দায়ী হল কোন অতিপ্রাকৃতিক শক্তির উপস্থিতি। এখানে মৃত মানুষের প্রেতাত্মা ঘুরে বেড়ায় বলে বিমান দুর্ঘটনা ও জাহাজ ডুবিয়ে দেওয়ার পেছনে মৃত মানুষের আত্মা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে।

বারমুডা উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে অবস্থিত একটি ব্রিটিশ সামুদ্রিক অঞ্চল ও দ্বীপরাষ্ট্র। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য উত্তর ক্যারোলাইনার হ্যাটেরাস অন্তরীপ অর্থাৎ কেপ হ্যাটেরাস থেকে পূর্ব -দক্ষিণ পূর্ব দিকে ১০৭০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এছাড়া কিউবা থেকে বারমুডার দূরত্ব ১৭৫৯ কিলোমিটার আর কানাডার নোভা স্কোশিয়ার কেপ সেবল দ্বীপ থেকে ১২৩৬ কিলোমিটার দক্ষিণে বারমুডার অবস্থান।

বারমুডার প্রধান দু’টি অর্থনৈতিক খাত হল সমুদ্রস্থিত বীমা এবং পর্যটন। বারমুডার জলবায়ু উপক্রান্তীয় ধরনের। এ অঞ্চলটি হ্যারিকেন বা ঘূর্ণিঝড় বলয়ের মধ্যে পড়েছে বলে এখানকার আবহাওয়া চরম আকার ধারণ করে হঠাৎ হঠাৎ। তবে ঘূর্ণিঝড় বলয়ের উত্তর সীমায় অবস্থিত বলে প্রবালপ্রাচীর দিয়ে বেষ্টিত বলে দ্বীপটি ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পেয়ে থাকে।

বারমুডা দ্বীপরাষ্ট্রটির রাজধানী বসেছে হ্যামিলটনে।
হ্যামিলটন রাজধানী হলেও বারমুডার বৃহত্তম নগরী সেন্ট জর্জেস।

বারমুডা একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, এর নিজস্ব সংবিধান, সরকার ও আইনসভা রয়েছে, যেটি এ অঞ্চলের জন্য আইন প্রণয়ন করতে পারে। তবে এ দেশের প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক যাবতীয় সম্পর্কের দায়দায়িত্বে রয়েছে যুক্তরাজ্য।

বারমুডা অঞ্চলে জনসংখ্যা প্রায় ৭৪ হাজার। সামুদ্রিক অঞ্চলগুলির মধ্যে বারমুডার জনসংখ্যাই বেশি।

এ দেশের নীতিবাক্য হলো -‘যেখানে ভাগ্য আমাদের বয়ে নিয়ে যাবে’। জাতীয় সঙ্গীত – ‘গড সেভ দ্য কুইন’।

এ অঞ্চলের নৃগোষ্ঠী হলো – কৃষ্ণাঙ্গ, শ্বেতাঙ্গ, বহুবর্ণ, এশীয়। জাতীয়তাবাদ – বারমুডীয়। বারমুডার আয়তন মোট ৫৩.৩ বর্গকিলোমিটার।

বারমুডার রাজধানী হ্যামিলটন এই সামুদ্রিক অঞ্চলের প্রধান বন্দরও। এ বন্দর শহরটি পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগরের গ্রেট সাউণ্ড বাহুর পূর্ব প্রান্তে বৃহত্তর বারমুডা দ্বীপের একটি গভীর জলের পোতাশ্রয়ের অর্থাৎ হ্যামিলটন পোতাশ্রয়টি উত্তর উপকূলে অবস্থিত। এই পোতাশ্রয় এলাকায় হাজারের উর্ধ্বে লোক বসবাস করে থাকে। জনসংখ্যার হিসাবে এ শহরটি পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম রাজধানী শহরগুলির একটি। এ শহরটি গড়ে ওঠে ১৭৯০ খৃষ্টাব্দে। শহরের আয়তন ০.২৮ বর্গকিলোমিটার। জানা যায়, ১৭৯০ খৃষ্টাব্দে ১৪৫ একর জমির উপরে এ অঞ্চলের ভবিষ্যৎ রাজধানী হিসেবে হ্যামিলটনটিকে প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করা হয় এবং ১৭৯৩ খৃষ্টাব্দে এটিকে নথিভুক্ত করা হয়। বারমুডার তৎকালীন গভর্নর বা প্রশাসক এ শহরটির নামকরণ করেছিলেন হ্যামিলটন। ১৮১৫ খৃষ্টাব্দে বিদ্যমান ঐতিহাসিক রাজধানী সেন্ট জর্জেস শহরের পরিবর্তে হ্যামিলটন শহরকে ঔপনিবেশিক রাজধানীর মর্যাদা দান করা হয়। ১৮৯৭ খৃষ্টাব্দে হ্যামিলটন নগরী বা সিটির মর্যাদা লাভ করে। ব্যবসা ও কর্মসংস্থান চাঙ্গা করার লক্ষ্যে ১৯৫৬ খৃষ্টাব্দে এর বন্দর আন্তর্জাতিক জাহাজের জন্য উন্মুক্ত অর্থাৎ শুল্ক ও করমুক্ত করে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: দেশের নাম সাঁউ তুমে ও প্রিন্সিপি

হ্যামিলটন বারমুডার প্রধান বন্দরগুলির একটি। এ নগরীটি দেশের অর্থনৈতিক কেন্দ্র ও পর্যটকদের জন্য অন্যতম গন্তব্য স্থান। পর্যটন এ শহরটির অর্থনীতির মেরুদণ্ড। এ শহরের মূল সড়কের ধার ধরে অবস্থিত ঘাটে প্রমোদতরীগুলি নোঙর ফেলে। সাধারণত প্রমোদতরীতে করেই পর্যটকরা বেড়াতে আসে। প্রমোদতরীতে সর্বরকমের আনন্দ -ফূর্তির সুব্যবস্থা রয়েছে। পকেট ভর্তি ডলার হলে এই প্রমোদতরীতে বসে অনেককিছুই করা যায়।

হ্যামিলটন শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে।

হ্যামিলটন নগরীর ভবনগুলি সাধারণত প্যাস্টেল রঙে রঞ্জিত রয়েছে। এগুলির ছাদগুলি স্থানীয় প্রবাল দিয়ে তৈরি ও সাদা রঙে রঞ্জিত। চার্চ স্ট্রিট সড়কে রয়েছে একটি বিশাল গীর্জা বা ক্যাথেড্রাল। এর কাছেই সেসনস হাউস, আদালত, বিচারবিভাগীয় কার্যালয়গুলি অবস্থিত। এই শহরের পারলা ভিল উদ্যানে বারমুডা গ্রন্থাগার ও জাদুঘরটি রয়েছে। নগর ভবনে একটি প্রদর্শনী কক্ষ আছে। হ্যামিলটন দুর্গ ও এর প্রতিরক্ষা প্রাচীরগুলিও দর্শনীয়। বারমুডার সামরিক স্থাপনাগুলি হ্যামিলটন শহরে অবস্থিত। শহরের পূর্ব দিকে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর রক্ষী সেনাদের প্রধান কার্যালয়টি রয়েছে।

হ্যামিলটন শহরটি বিষুবরেখা থেকে বেশ উত্তরে ৩২ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও উপকূলীয় সমুদ্রস্রোত ও আটলান্টিক মহাসাগরের প্রভাবের কারণে এখানকার জলবায়ু অপেক্ষাকৃত উষ্ণ ও মৃদু প্রকৃতির। হ্যামিলটন শহরে শীতকাল বলতে কিছু নেই। সারা বছর ধরেই এই শহরে বৃষ্টিপাত হয়, কোনও শুষ্ক মৌসুম নেই।

-লিয়াকত হোসেন খোকন

Leave a Comment