দেশের নাম ইরিত্রিয়া।
এখানে মেয়েরা স্যুট পরে অফিসে আসে।
ইরিত্রিয়া নয়টি স্বীকৃত জাতিগোষ্ঠীর একটি বহুজাতিগত দেশ। নয়টি স্বীকৃত জাতিগোষ্ঠী নয়টি ভিন্ন ভাষা বলে, সবচেয়ে ব্যাপকভাবে কথ্য ভাষা হলো টাইগ্রিনিয়া। অন্যগুলি হলো টাইগ্রে, সাহো, কুনামা, নারা, আফার, বেজা, বিলেন এবং আরবি।
এ দেশের অধিকাংশ মানুষ খ্রিস্ট ধর্ম ও ইসলাম ধর্ম মেনে চলে।
একসময় এ দেশে তাকসুম রাজ্য স্থাপিত হয়েছিল। যা কি-না ছিল প্রথম এবং দ্বিতীয় শতাব্দীতে।
চতুর্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ইরিত্রিয়ায় বহু লোক খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হয়।
মধ্যযুগীয় সময়ে ইরিত্রিয়ায় বেশির ভাগ অংশ মেদ্রি বাহরি রাজ্যের অধীনে ছিল।
একসময় ইতালীয়রা ইরিত্রিয়া দখল করে নেয়। ১৯৪২ খৃষ্টাব্দে ইতালীয় সেনাবাহিনীর পরাজয় ঘটে ইরিত্রিয়দের হাতে। এরপর বছর দশেক ধরে ব্রিটিশদের দখলে ছিল এ দেশটি। ব্রিটিশরা চলে গেলে ইথিওপিয়া এ দেশটি পরোক্ষভাবে শাসন করে।
অতঃপর ইরিত্রিয়ানরা সংগঠিত হয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু করে। ইথিওপিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে ১৯৯৩ খৃষ্টাব্দে ইরিত্রিয়া দেশটি প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতা লাভ করে।
ইরিত্রিয়া নামটি লোহিত সাগরের প্রাচীন গ্রিক নাম থেকে নেওয়া হয়েছে। যেমন, ইরিথ্রা থ্যালাসান, বিশেষণ এরিথ্রোস ‘লাল’ এর উপর ভিত্তি করে। এ নামটি ১৮৯০ খৃষ্টাব্দে ইতালীয় ইরিত্রিয়া বা কলোনিয়া ইরিত্রিয়া গঠনের সাথে প্রথম আনুষ্ঠানিক ভাবে গৃহীত হয়েছিল। পরবর্তী ব্রিটিশ এবং ইথিওপিয়ান দখলের সময় এই নামটি বজায় ছিল।
১৯৯৩ খৃষ্টাব্দের স্বাধীনতার গণভোট এবং ১৯৯৭ খৃষ্টাব্দের সংবিধান দ্বারা এটিকে পুনরায় নিশ্চিত করা হয়েছিল।
ইরিত্রিয়া দেশটি পূর্ব আফ্রিকার হর্ন অফ আফ্রিকা অঞ্চলের একটি দেশ।
ইরিত্রিয়ার দক্ষিণে ইথিওপিয়া, পশ্চিমে সুদান এবং দক্ষিণ -পূর্বে জিবুতি দেশটি রয়েছে। ইরিত্রিয়ার উত্তর -পূর্ব এবং পূর্ব অংশে লোহিত সাগর ও এর একটি বিস্তৃত উপকূলরেখা রয়েছে।
ইরিত্রিয়া দেশটির আয়তন মোট ১১৭,৬০০ বর্গকিলোমিটার।
জনসংখ্যা ৫,৬৭৩,৫২০ জন।
এ দেশের মধ্যে রয়েছে ডাহলাক দ্বীপপুঞ্জ এবং বেশ কয়েকটি হানিশ দ্বীপ।
ইরিত্রিয়া দেশটির সরকারি ভাষা -আরবি, ইংরেজি, তিগ্রিনিয়া।
আঞ্চলিক ভাষাগুলি হলো – তিগ্রে, সাহো, বিলেন, আফার, কুনামা, নরা, হ্যডারেব।
দেশটি প্রথম স্বাধীনতা লাভ করেছিল ইতালি থেকে ১৯৪১ খৃষ্টাব্দে।
ইরিত্রিয়ার রাজধানী বসেছে আসমারায়। রাজধানী শহর আসমারাকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়। শহরটিতে হাজার হাজার আর্ট ডেকো, ভবিষ্যতবাদী, আধুনিকবাদী এবং যুক্তিবাদী ভবন রয়েছে। যা ইতালীয় ইরিত্রিয়ার সময়কালে নির্মিত হয়েছিল।
আরও পড়ুন: স্কটল্যান্ড যুক্তরাজ্যে থেকেও যেসব ঐতিহ্য আর স্বাতন্ত্র্য বহন করে চলেছে
ঊনবিংশ শতাব্দীর একটি ছোট শহর আসমারা ১৮৮৯ খৃষ্টাব্দে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এই শহরে রয়েছে – অপেরা হাউস, মারিয়াম ক্যাথেড্রাল, আসমারা অপেরা, নিওক্লাসিক্যাল আসমারা সিটি হল।
শহরটি ২,৩২৫ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত, যা আসমারা শহরটিকে করেছে বিশ্বের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ উঁচুতে অবস্থিত।
৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ১০০ থেকে ১০০০ জন লোক নিয়ে আসমারা প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
ইরিত্রিয়ার জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ঐতিহ্যবাহী ইরিত্রিয়ান পোশাক বেশ বৈচিত্র্যময়। বড় শহরগুলোতে, বেশির ভাগ লোকেরা পশ্চিম নৈমিত্তিক পোশাক যেমন জিন্স এবং শার্ট পরেন। অফিসে পুরুষ এবং মহিলা উভয়ই প্রায়শই স্যুট পরেন।
খ্রিস্টান টাইগ্রিনিয়া হাইল্যান্ডবাসীদের একটি সাধারণ ঐতিহ্যবাহী পোশাকের মধ্যে রয়েছে মহিলাদের জন্য জুরিয়া নামক উজ্জ্বল সাদা গাউন এবং পুরুষদের জন্য সাদা প্যান্টের সাথে একটি সাদা শার্ট থাকে।
ইরিত্রিয়া মুসলিম জনসংখ্যা
ইরিত্রিয়া মুসলমানদের জন্য অন্যতম প্রাচীন আবাসস্থল। এখানে মদিনার আগে ইসলাম পৌঁছেছিল বলে জনশ্রুতি আছে। মুসলিম জনসংখ্যা এখানে ক্রমেই বাড়ছে। বিশ্ব জনসংখ্যা পর্যালোচনা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ইরিত্রিয়ার ৪৯ ভাগ জনসংখ্যা মুসলমান।
ইরিত্রিয়ান নিম্নভূমিতে মুসলিম সম্প্রদায়গুলিতে, মহিলারা ঐতিহ্যগতভাবে উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরে।
ইরিত্রিয়া বিবাহ
ইরিত্রিয়া দেশটিতে একটি নিয়ম আছে, ইরিত্রিয়ায় অন্তত দু’টি বিয়ে করতেই হবে। নির্দেশ অমান্য করলেই যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড। এমনকী কোনও স্ত্রী যদি তার স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে বাধা দেন, শাস্তি হবে তারও।