ঢাকার হোসেনী দালান নির্মাণ করেন কে এটা নিয়ে প্রায়ই নানা আলোচনার সূত্রপাত হয়। বাংলাদেশ কিংবা ভারতসহ অন্যান্য দেশেও হোসেনী দালান নিয়ে ঔৎসুক্য দেখা যায়। বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে।
হোসেনী দালান কিংবা হোসনী দালান পুরনো ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে অবস্থিত। এই স্থাপনাটি প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো। ধারনা করা হয় ১৭ শতকে মোগল সম্রাট শাহজাহানের আমলে হোসেনি দালান নির্মাণ করা হয়।
হোসেনী দালান নির্মাণ করেন কে এই নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে কিছুটা সংশয় রয়েছে। অনেকে মনে করেন শায়েস্তা খাঁর আমলে নির্মিত হয় হোসেনী দালান। তবে ইমামবাড়ার দেয়ালে সংরক্ষিত একটি শিলা লিপি থেকে জানা যায়, ঢাকার সুবেদার শাহ সূজার আমলে ১৬৪২ সালে তাঁর এক নৌ সেনাপতি মীর মুরাদ কর্তৃক নির্মিত হয় প্রথম তাজিয়া কোণা অংশটি।
আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া রচিত ‘বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ’ বইয়ে ভবনের দেয়ালে লাগানো শিলালিপির কথা উল্লেখ আছে। অন্যান্য ঐতিহাসিকরাও এই তথ্য সমর্থন করেছেন।
আরও পড়ুন:
ঢাকার যেসব অনন্য সাধারণ স্থাপত্য কীর্তি ভ্রমণ পিয়াসীদের পদচারণায় মুখরিত
হোসেনী দালান অতীতে বেশ জমজমাট ছিল। একসময় ঢাকার শিয়া সম্প্রদায়ের আনাগোনায় হোসেনী দালানের চাকচিক্য কিংবা শান শওকত ছিল বেশ গৌরবময়। ঢাকার এক সময়ের সম্ভ্রান্ত শিয়া সম্প্রদায়ের অর্থানুকুল্যে হোসেনী দালান ছিল খ্যাতির শীর্ষে।
হোসেনী দালান মূলত: শিয়া সম্প্রদায়ের উপসনালয় যা ইমামবাড়া নামেও পরিচিত। একসময় ঢাকার সম্ভ্রান্তমহলের বড় একটা অংশ ছিলেন শিয়া সম্প্রদায়ের অনুসারী। তাদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে হোসেনী দালান সে সময়ের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বিশেষ প্রভাব রেখেছিল।
হোসেনী দালানের তাৎপর্য অনুধাবন করা যায় বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত এই প্রতিষ্ঠানের একটি রেপ্লিকা পর্যবেক্ষণ করলে। সে সময়ে এই রেপ্লিকাটি তৈরি হয়েছিল রূপা দিয়ে।
মূল তোরণ দিয়ে প্রবেশ করলে হোসেনী দালানের গৌরবময় অতীত ইতিহাসের অনেকাংশ এখনও চোখে পড়ে। শিয়া সম্প্রদায়ের কবরস্থান, মূল ভবন এবং একটি আকর্ষণীয় বাগান ভবনটির শোভা বর্ধণ করছে। মূল ভবনের পিছনে গেলে চোখে পড়বে একটি দীঘি।
প্রতিবছর আরবী মহররম মাসের প্রথম ১০ দিন পবিত্র আশুরা উপলক্ষে জমজমাট হয়ে উঠে হোসেনী দালান। শিয়া মুসলমানদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে হঠে সার্বক্ষণিকভাবে। সে সময়ে এখানে ধর্মীয় নানা ঐতিহ্যের চর্চা করা হয়। ঢাকার বিখ্যাত তাজিয়া মিছিল শুরু হয় এখান থেকেই।
ইরান সরকারের আর্থিক সহায়তায় হোসেনী দালান ভবনের পুরনো আভিজাত্য ফিরিয়ে আনা এবং এর সৌন্দর্য বর্ধণের লক্ষ্যে ২০১১ সালে ব্যাপক সংস্কার সাধন করা হয়। ইরানী টাইলসে আধুনিক ক্যালিওগ্রাফির সংমিশ্রণে হোসেনী দালানের দেয়াল নান্দনিক রূপে সজ্জিত করা হয়েছে।
পর্যটকদের কাছে অনেক আকর্ষণীয় হোসেনী দালান পরিদর্শনের জন্য প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত খোলা রাখা হয়।