দেশান্তর

যে দেশ নদ নদী -উপসাগরে ভরা 

টেমস নদী,

যুক্তরাজ্যকে বলা হয়, ইংল্যান্ড, বৃটেন, ব্রিটিশ। কেউবা আদর করে বলেন, ইংরেজদের দেশ। অনেকের ভাবনা,  ইংল্যান্ড বুঝি শুধু নগর সভ্যতার দেশ – ওখানে শুধু নগর আর নগর। যুক্তরাজ্যেও রয়েছে নদীর ছড়াছড়ি। ওখানের প্রতিটি নদী নাব্যতা হারায় না কখনও, ওখানে কেউ নদী দখল করার দুঃসাহস দেখায় না। যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা প্রকৃতি প্রেমিক বলে তাদের দেশের নদীগুলোর জলধারা স্বচ্ছ, পরিস্কার ধবধবে সাদা রংয়ের।

যুক্তরাজ্য যে নদীর দেশ, সে কথা ক’জনেই বা ভাবেন। টেমস নদীর কথা অনেকেই শুনেছেন, কেউবা কাছ থেকে দেখেছেন টেমস নদীকে। লন্ডন শহর এই টেমস নদীর তীরে অবস্থিত।

টেমস নদীর দৈর্ঘ্য ৩৪৬ কিলোমিটার। এ নদীটি যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী। টেমস নদীর শুরুটি গ্লুচেস্টারশায়ার কাউন্টির টেমস হেডে অবস্থিত। টেমস নদীটি উত্তর সাগরে প্রবাহিত হয়ে, অবশেষে একটি মোহনা তৈরি করেছে। নদীটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে একটি কারণে , তা হল, নদীটি লন্ডন শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলে গেছে। টেমস নদী সম্পূর্ণভাবে জোয়ারের ওপর নির্ভরশীল। এ নদীটি যুক্তরাজ্যের পশ্চিম ও দক্ষিণ – পূর্বের বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে। এর ২০ টিরও বেশি উপনদী আছে। এখানের টেমস দ্বীপ রয়েছে, এ নদীর পানি লবণ আর মিঠা পানিযুক্ত। নদীতে রয়েছে উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতের বৈচিত্র্যের সমাহার।

লন্ডনের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে টেমস নদী পৃথিবী বিখ্যাত। এই নদীর পাশে রয়েছে বহু জনপদ। এর মধ্যে রয়েছে অক্সফোর্ড, রেডিং, উইন্ডসর, মেইডেনহেড প্রভৃতি শহর। এছাড়া আরও যে অঞ্চলসমূহ রয়েছে, তা হল – গ্লস্টারশার, অক্সফোর্ডশার, বার্কশার, বাকিংহামশার, সারে, এসেক্স, কেন্ট – প্রভৃতি।

নদীর নামের উৎপত্তি হয়েছে টেমস উপত্যকা থেকে। টেমস উপত্যকাটি অক্সফোর্ড, পশ্চিম লন্ডন এবং টেমস গেটওয়ের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। এই উপত্যকাকে কেন্দ্র করেই টেমস নদীটি প্রবাহিত হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে দীর্ঘতম নদী হল সেভারন। সেভারন নদীর দৈর্ঘ্য ৩৫৪ কিলোমিটার। এ নদীটি ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত। সেভারন বা সেভর্নের উৎসগুলব ৬০০ মিটারেরও বেশি উচ্চতায় অবস্থিত, প্লালাইমনের শীর্ষের অঞ্চলে – যা কিনা ক্যামব্রিয়ান পর্বতমালার অন্তর্গত। এ নদীটি ল্যানিডলোইস শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। পাউইস অঞ্চল, সেরেডিজিওনের ওয়েলস কাউন্টির অভ্যন্তরে রয়েছে। সেভারন নদীর তীরে গড়ে উঠেছে ওরচেস্টারশায়ার, শ্রপশায়ার এবং গ্লৌচেস্টারশায়ারের পাশাপাশি ওরচেস্টার, শ্রুসবারি আর গ্লুচেস্টারের মতো শহরগুলো। নদীর জলধারা প্রতি সেকেন্ডে ১০৭ মিটার পর্যন্ত গতিতে চলাচল করে থাকে। সেভারন সৈকতের গ্রামের পাশে এসে এ নদীটি একটি মোহনায় রূপান্তরিত হয়েছে।

নদীর নামের উৎপত্তি হয়েছে টেমস উপত্যকা থেকে। টেমস উপত্যকাটি অক্সফোর্ড, পশ্চিম লন্ডন এবং টেমস গেটওয়ের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। এই উপত্যকাকে কেন্দ্র করেই টেমস নদীটি প্রবাহিত হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের অন্যান্য নদীগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো,

মার্সি নদী, ট্রেন্ট নদী, গ্রেট ওউস নদী, ওয়াই নদী, তাই নদী, স্পে নদী, ক্লাইড নদী, টুইড নদী, নিঙ নদী, ইডেন নদী, ডি নদী, অ্যাভন নদী, স্যালিসবারি নদী, টিম নদী, ডন নদী, বুনন নদী, রিবল নদী, মিডওয়ে নদী, টিস নদী, এসক নদী, লাইন নদী, লিডেল ওয়াটার নদী, পেটারেল নদী, ওয়াম্পুল নদী, ডেরওয়েন্ট নদী, ড্যাডন নদী, ক্রাইক নদী, কেন্ট নদী ইত্যাদি।

আরও পড়ুন: যে শহরে পায়রা মনোরঞ্জন করে 

যেখানে মৃত মানুষের আত্মা দুর্ঘটনা ঘটায়

মার্সি নদীটি যুক্তরাজ্যের উত্তর -পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত, এ নদীর দৈর্ঘ্য ১১৩ কিলোমিটার। মার্সি নদীটি স্টকপোর্ট শহরের কাছে উৎপন্ন হয়েছে। এ নদীর অবস্থান গ্রেটার ম্যানচেস্টার কাউন্টিতে। নদীটি লিভারপুল শহরের উপকূল হয়ে মার্সবসাইড কাউন্টিতে গিয়ে শেষ হয়েছে। নদীটি তিনটি উপনদী দ্বারা গঠিত, এ নদী তিনটি হল, গোইট, এসরো এবং টেম।

ইডেন নদী পাহাড়ের চূড়া থেকে নেমে এসেছে। এ নদীর দৈর্ঘ্য ১৪৫ কিলোমিটার। ডি নদীটি ইংল্যান্ডের ওয়েলসের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটি স্নোডোনিয়া থেকে শুরু হয়ে চেস্টারের মধ্য প্রবাহিত হয়ে উইরাল উপদ্বীপের কাছে সমুদ্রে গিয়ে পড়েছে।

যুক্তরাজ্যের নদী হয়ে যাওয়া যায় আইরিশ সাগরে, ব্রিস্টল উপসাগরে, ইংলিশ চ্যানেলে, পাস দে ক্যালাইসে, উত্তর সাগরে। এইভাবে, যুক্তরাজ্যের প্রায় সব দিক থেকে সমুদ্রে প্রবেশাধিকার রয়েছে – যা দেশটিকে অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত করে রেখেছে।

-লিয়াকত হোসেন খোকন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *